ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানার আন্ধারমানিক গ্রামে এক নববধূকে (১৭) সারারাত আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মধ্যস্থতায় অভিযুক্তদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ঘটনা জানতে পেরে নির্যাতনের শিকার ওই নববধূ লজ্জায়-অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বর্তমানে অচেতন অবস্থায় ওই নববধূ হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সোমবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর এ ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান। আরেকটি দল ঘটনা সম্পর্কে জানতে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছেন। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত জ্ঞান ফিরে না আসায় ওই নববধূর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা বলা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্তরা হলেন- মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আন্ধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন, বাবু বেপারী ও রাজিব ফকির। নির্যাতনের শিকার ওই নববধূর বাবার বাড়ি ও অভিযুক্ত ৩ যুবকের বাড়ি একই এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, তিনমাস আগে একই উপজেলার ভাষানচর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে হয়। ওই কিশোরীর স্বামী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ কারণে তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে যান। অভিযুক্ত ওই তিন যবুক ওই কিশোরীর পূর্বপরিচিত। রোববার রাতে প্রতিবেশী রাজিব ওই কিশোরীকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন। রাজিব ওই কিশোরীকে তার ঘরে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন নাজমুল ও বাবু। তখন স্থানীয় ফারুক ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি বাইরে থেকে ওই ঘরের দরজা আটকে দেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সারারাত আটকে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন ওই ৩ যুবক। রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় ওই কিশোরীর স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরান ভুইয়া সোমবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে রাজিবের বাড়িতে যান।
সেখান থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। এ সময় পরান ভুইয়া বিষয়টি ধাঁমাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে ওই ৩ যুবককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং কিশোরীর পরিবারকে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। তবে প্রতিবেশীরা ঘটনা জেনে গেলে ওই কিশোরী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই কিশোরীর ভগ্নিপতি জানান, রাতে রাজিব নামের এক যুবক জরুরি কথা আছে বলে তার শালীকে (কিশোরী) ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে সারারাত রাজিবের ঘরে আটকে রাখা হয়। সকালে জেনেছি ওই ঘরে রাজিব ছাড়াও নাজমুল ও বাবু ছিল। পরে সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য পরান ভুইয়ার সহায়তায় ওই ঘর থেকে তার শালীকে (কিশোরী) উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোরীর ভগ্নিপতি আরও বলেন, বাড়ি ফিরে এসে তার শালী (কিশোরী) ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার শালীর (কিশোরী) এখনও জ্ঞান ফেরেনি। কী কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে তার কারণ জানা সম্ভব হয়নি। জ্ঞান ফিরে আসলে তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।
কাজীরহাট থানা পুলিশের ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, সন্ধ্যার পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থালে পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে। আর আমি ওই নববধূর সঙ্গে কথা বলতে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছি। তবে এ ঘটনায় নববধূর পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শাহ রাজ হায়াত বলেন, নববধূ এখন শঙ্কামুক্ত। তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি খুবই বিপর্যস্ত। তিনি কথা বলার মতো সুস্থও নন। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
Leave a Reply